বিটকয়েন কি ? বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে ?
প্রত্যেকটি দেশের মধ্যে নিজস্ব কার্রেন্সি রয়েছে, এই কার্রেন্সি জিনিসপত্র কেনার জন্য ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন দেশের কার্রেন্সি বিভিন্ন রকমের হয় , যেমন – ভারতের কার্রেন্সির নাম রুপি , বাংলাদেশের কার্রেন্সির নাম টাকা , আমেরিকার কার্রেন্সির নাম ডলার ইত্যাদি। এইসব কার্রেন্সির ভ্যালু আলাদা আলাদা হয়।
একইভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে একপ্রকার কার্রেন্সি ব্যবহার করা হয় , যাকে বলা হয় ক্রিপ্টোকার্রেন্সি। বর্তমানে ব্যাবহৃত সবথেকে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকার্রেন্সি হলো বিটকয়েন। তাহলে বিটকয়েন সম্বন্ধে যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলি জেনে নেওয়া যাক।
Table of Contents
বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে ?
বিটকয়েন হলো ভার্চুয়াল কার্রেন্সি, একে ডিজিট্যাল কার্রেন্সিও বলা যেতে পারে। বিটকয়েনকে ভার্চুয়াল কার্রেন্সি বলা হয় কারণ এটি অন্যান্ন কার্রেন্সির থেকে সুম্পূর্ণ আলাদা। আমরা যেমন অন্নান্য কার্রেন্সি দেখতে ও ছুতে পারি, তেমন ভার্চুয়াল কার্রেন্সি দেখতে ও ছুতে পারিনা। বিটকয়েনকে শুধুমাত্র অনলাইন ওয়ালেটই স্টোর করে রাখতে পারি। 2008 সালে Satoshi Nakamoto বিটকয়েন আবিষ্কার করেছিলেন। 2009 সালে বিটকয়েনকে গ্লোবাল পেমেন্ট হিসাবে প্রকাশ করা হয়েছিল।
বিটকয়েন এ একটি মজার বিষয় হলো যে এই ধরণের কার্রেন্সির উপর কোনো ব্যাঙ্ক বা কোনো দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। এটি একটি স্বাধীন কারেন্সি। অন্নান্য কার্রেন্সি যেমন এক জায়গা থাকে আর এক জায়গায় পাঠাতে গেলে ব্যাঙ্কিং চার্জ লাগে , এখানে কোনো ধরণের চার্জ লাগে না , অর্থাৎ কোনোরকম চার্জ ছাড়াই এই কার্রেন্সি ইনস্ট্যান্ট এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো যায়। বিটকয়েন এর ব্যবহার যে কেউ করতে পারে। অনলাইন পেমেন্ট ছাড়া এই বিটকয়েন অন্য কার্রেন্সির সাথেও পরিবর্তন করে ব্যাঙ্কে ট্রান্সফার করা যায়। এই কার্রেন্সির একটি খারাপ দিক হলো যে কোনোরকম যদি ফ্রড হয় তাহলে আপনি কারোর কাছে অভিযোগ করতে পারবেন না।
বিটকয়েনের ভ্যালু
বিটকয়েনের ভ্যালু প্রতিনিয়ত কমতে ও বাড়তে থাকে , কারণ এই ধরণের কার্রেন্সি কন্ট্রোল করার কোনো অথোরিটি থাকে না। বিটকয়েনের ভ্যালু চাহিদার উপরও কমতে ও বাড়তে থাকে।
কিভাবে বিটকয়েন থেকে ইনকাম করবেন?
ইনভেস্ট
বিটকয়েন থেকে আয় করার প্রথম ধাপ হলো ইনভেস্ট। যদি আপনার কাছে বেশি অর্থ থাকে তাহলে আপনি বিটকয়েন কিনতে পারেন। এছাড়া যাদের কাছে পুরো বিটকয়েন এ ইনভেস্ট করার মতো বেশি অর্থ নেই অথচ বিটকয়েন কিনতে আগ্রহী তারা বিটকয়েন এর ছোট একটি অংশ Satoshi কিনতে পারে। এইভাবে বিটকয়েন এর ছোট অংশ কিনতে কিনতে যখন এক বা একাধিক বিটকয়েন হয়ে যাবে তখন আপনি বিটকয়েন বিক্রি করে অধিক আয় করতে পারবেন। ভারতে জনপ্রিয় কিছু ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের নাম হলো CoinSwitch Kuber, CoinDcx, WazirX যেখান থেকে বিটকয়েন কেনাবেচা করা যায়। ভারতে 1 টি বিটকয়েন এর মূল্য বর্তমানে 47,15,437.52 RS, বাংলাদেশী মুদ্রায় ৳ 54,34,008.77 এবং মার্কিনি মুদ্রায় $ 63,305.00 ।
মাইনিং
বিটকয়েন থেকে আয় করা বা বিটকয়েন পাওয়ার দ্বিতীয় ধাপ হলো মাইনিং। এই পদ্ধতির সাহায্যে কোনো বিটকয়েন না কিনে বা না এক্সচেঞ্জ করে আপনি নিজের জন্য একটি বিটকয়েন প্রস্তূত করতে পারবেন। অর্থাৎ নতুন বিটকয়েন তৈরি করার পদ্ধতিকে মাইনিং বলা হয়। তাহলে জানা যাক এই পদ্ধতি থেকে কিভাবে বিটকয়েন পাওয়া যায়।
বিটকয়েন মাইনিং অত্যন্ত জটিল গণিত সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নতুন বিটকয়েন তৈরি করার প্রক্রিয়া যা মুদ্রার লেনদেন যাচাই করে। বিটকয়েন এর মাইনিং বিটকয়েন মাইনাররা করে। বিটকয়েন মাইনিং করার জন্য হাই স্পিড কম্পিউটার এবং মাইনিং সফটওয়্যার এর প্রয়োজন হয়। মাইনাররা হাইস্পীড কম্পিউটার প্রয়োগ করে জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিটকয়েন এর লেনদেন সুরক্ষিত রাখে। এই কাজের জন্য তাদের কিছু বিটকয়েন উপহার হিসাবে দেওয়া হয়। এইভাবে নতুন বিটকয়েন বাজারে আসে।
আমাদের কি বিটকয়েন এ ইনভেস্ট করা উচিত?
বিটকয়েন এর ভ্যালু প্রতিনিয়ত ওঠা নামা করে , সেইজন্য এখানে ভালো মুনাফা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তবে এই একই কারণের জন্য আবার অনেক লোকসানও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন যে আপনি এই লোকসান বহন করতে পারবেন কিনা , তবেই ইনভেস্ট করুন। আপনাকে আরো একটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে আপনি কখনই যেন জরুরি বা অবসর তহবিল থেকে কোনো টাকা ইনভেস্ট না করেন। যাইহোক বিটকয়েন এ এমনকি সামান্য পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করে সম্পদ তৈরিতে কার্যকর বলে প্রমানিত হয়েছে।
বিটকয়েন এমন কোনো জিনিস নয় যেটা আপনাকে রাতারাতি ধোনি করে দিতে পারে। এই কার্রেন্সির পিছনে কি যুক্তি রয়েছে এবং এটি কিভাবে কাজ করে সেটা আপনাকে সময় নিয়ে বুঝতে হবে। তারপর আপনি সিদ্ধান্ত নিন বিটকয়েন এ ইনভেস্ট করবেন কিনা।