ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায়

Laptop Buying Guide | ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায়- (স্টেপ বাই স্টেপ গাইড )

আমরা যখন ল্যাপটপ কিনবো বলে ঠিক করি তখন আমরা বুঝে উঠতে পারিনা ঠিক কী ধরনের ল্যাপটপ কিনবো। আমাদের বাজেট যাই হোক না কেন আমরা কিভাবে বুঝবো আমাদের কি ধরণের ল্যাপটপ কেনা উচিত ? আমরা যখন ল্যাপটপ কিনতে যাই সেখানে খেয়াল করলে দেখা যাবে বিভিন্ন ল্যাপটপের বৈশিষ্ট বিভিন্ন রকমের ।

ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায়গুলি কি কি ?:

ল্যাপটপের মডেল গুলিতে আমরা দেখি i3, i5, i7, i9 অথবা Amd Ryzen, HDD অথবা SSD , LPDDRX 4x RAM অথবা LPDDR 3 RAM ,integrated Graphis অথবা Dedicated Graphis ইত্যাদি লেখা থাকে ।

এই লেখাগুলির মানে কি ? এই গুলো যদি আমরা বুঝে নিতে পারি তাহলে আমরা আমাদের বাজেটের মধ্যে একটি সঠিক ল্যাপটপ নির্বাচন করতে পারবো।

ল্যাপটপ কেনার আগে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি জেনে রাখা প্রয়োজন :

প্রসেসর

ল্যাপটপের অথবা কোনো কম্পিউটার সিস্টেমের বা স্মার্টফোনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রসেসর। প্রসেসর এর উপরই নির্ভর করে ল্যাপটপের পারফরম্যান্স কেমন হবে।

আমরা যখন ল্যাপটপ কিনতে যাই সেখানে আমরা দেখি ল্যাপটপ গুলিতে intel i3, intel i5 , intel i7 ও i9 এবং Amd Ryzen এর প্রসেসর ব্যবহার করা হচ্ছে । এখানে যেটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে প্রত্যেক প্রসেসরগুলোর উপরে বিভিন্ন জেনারেশন লেখা থাকে । যেমন – 9th Gen, 10th Gen, 11th Gen ।

ভালো ল্যাপটপ কেনার জন্য ওই প্রসেসর গুলি থেকে লেটেস্ট জেনারেশন এর প্রসেসর নির্বাচন করতে হবে। এর আগে আমাদের একটু জানা দরকার প্রসেসর এর কোর গুলির সম্বন্ধে।

যে প্রসেসর এর যত বেশি কোর থাকবে সেই প্রসেসর ততো বেশি দ্রুত কাজ করবে। ধরা যাক আপনি দুটো হাত দিয়ে একটি কাজ করছেন সেখানে যদি দুটো হাতের পরিবর্তে চারটে হাত ব্যবহার করা হয় সেই জায়গায় কাজটি আরও দ্রুত হয় ।

ঠিক একইভাবে প্রসেসর এর যত কোর থাকবে প্রসেসর তত দ্রুত কাজ করবে। প্রসেসর এবং জেনারেশন সম্বন্ধে তো বোঝা গেল, এবার আমাদের জানতে হবে কোন ব্যবহারকারী কোন প্রসেসর এর ল্যাপটপ নির্বাচন করবে ।

  • Intel i3

intel i3 প্রসেসরটি Dual core প্রসেসর , মানে এই প্রসেসরটির দুটি কোর রয়েছে । এই প্রসেসরটি 25 থেকে 30 হাজার বা তার একটু বেশি বাজেট ল্যাপটপ গুলিতে দেখতে পাওয়া যায় । যে ব্যবহারকারীরা অফিসের কাজ করেন , সার্চিং করেন , ভিডিও দেখেন , মাইক্রোসফট এক্সেল , পাওয়ার পয়েন্ট, বিভিন্ন প্রজেক্টে এর কাজ ,ডাটা এন্ট্রির কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে এই প্রসেসরটি যথেষ্ট।

  • intel i5

এই প্রসেসরটিতে Dual core মানে দুটি কোর অথবা Quard core মানে চারটি কোর দেখতে পাওয়া যায়। এই প্রসেসর এর ল্যাপটপগুলি i3 প্রসেসর এর থেকে একটু বেশি দাম হয়।

কারণ এই প্রসেসর এর ল্যাপটপগুলি i3 প্রসেসর এর থেকে অধিক ফার্স্ট হয়। যে ব্যবহারকারীরা হাই গ্রাফিক্স এর গেম খেলেন, ভিডিও এডিটিং করেন , বড় বড় অ্যাপস ও সফটওয়্যার ব্যাবহার করেন তারা intel i5 প্রসেসর ব্যবহার করতে পারেন ।

  • intel i7 ও intel i9

intel i7 প্রসেসর এ 4টি অথবা 6টি কোর দেখতে পাওয়া যায় এবং intel i9 প্রসেসরটিতে 6টি অথবা 8টি কোর দেখতে পাওয়া যায় । এই প্রসেসর দুটি আগের দুটি প্রসেসর এর থেকে অধিক পাওরফুল। এই প্রসেসর এর ল্যাপটপ গুলির দাম অনেকটাই বেশি।

যে ব্যবহারকারীরা 4k ভিডিও এডিটিং করেন , হাই ফাই গেম খেলেন , বড়ো বড়ো সফটওয়্যার, গ্রাফিক্স এর কাজ করেন এছাড়া আরো হাই ফাই কাজ করেন তারা এই প্রসেসর ব্যবহার করতে পারেন ।

এছাড়া আপনি যদি কম বাজেটের মধ্যে ভালো পারফর্মেন্স এর ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে AMD র লেটেস্ট জেনারেশন এর প্রসেসর নিতে পারেন ।

আপনার জন্য ভালো ল্যাপটপ নির্বাচন করবেন কিভাবে ?

ডিসপ্লে

আমরা যখন ল্যাপটপ কিনতে যাই সেখানে বিভিন্ন সাইজের ডিসপ্লে দেখতে পাই। যেমন 10 ইঞ্চি ডিসপ্লে, 13 ইঞ্চি ডিসপ্লে, 14 ইঞ্চি ডিসপ্লে ইত্যাদি। সাধারণত আমরা তিন ধরনের ডিসপ্লে দেখতে পাই। যেমন – এইচডি ডিসপ্লে, ফুল এইচডি ডিসপ্লে এবং 4k ডিসপ্লে। তাহলে আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ল্যাপটপের ডিসপ্লে নির্বাচন করব।

আরো পড়ুন

র‍্যাম্

প্রসেসর এর মত Ram ও ল্যাপটপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । Ram এর পুরো নাম হল Random access Memory । আমরা ল্যাপটপের মধ্যে যখন কোন অ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়্যার খুলি তখন তা Ram এর মধ্যে লোড হয় । তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কত জিবি Ram আমাদের ল্যাপটপের জন্য যথেষ্ট ।

যে ব্যাবহারকারীরা i3 প্রসেসর এর ল্যাপটপ ব্যবহার করেন তাদের জন্য নূন্যতম 4 জিবি RAM এর প্রয়োজন । এই সেগমেন্টে 4 জিবি RAM যথেষ্ট । যারা i5 প্রসেসর এর ল্যাপটপ ব্যবহার করেন তাদের জন্য 8 জিবি যথেষ্ট। এর পাশাপাশি যারা i7 ও i9 প্রসেসর এর ল্যাপটপ ব্যবহার করেন তাদের 16 জিবি RAM ব্যবহার করা ভালো ।

গ্রাফিক্স

যারা ল্যাপটপে বা কম্পিউটারে গেম খেলতে ভালোবাসেন তাদের জন্য গ্রাফিক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ল্যাপটপে সাধারণত দুই ধরনের গ্রাফিক্স কার্ড দেখতে পাওয়া যায় । একটি হলো ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড এবং দ্বিতীয়টি হলো ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড।

গ্রাফিক্স কার্ড ল্যাপটপে কি কাজ করে একটু জেনে নেওয়া যাক। ল্যাপটপ চালু হওয়ার পর যা কিছু আমরা দেখি বা যা কিছু আমাদের দেখানো হয় সেটি গ্রাফিক্স কার্ডের মাধ্যমে হয়।

আমরা যখন কোন ভিডিও দেখি বা গেম খেলি সেখানে যে ভিজ্যুয়াল ইমেজ দেখি সেটি হলো গ্রাফিক্স কার্ডের কাজ। এবার আমাদের জানতে হবে ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড এর ল্যাপটপ কেনা উচিত ? না ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড এর ল্যাপটপ কেনা উচিত ?

যে ল্যাপটপ গুলিতে ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ড লেখা থাকে সেই ল্যাপটপ গুলি Ram থেকে গ্রাফিক্সের কাজ করে। কোনো ল্যাপটপের যদি 4 জিবি Ram থাকে সেখানে ল্যাপটপ টি 2 জিবি Ram গ্রাফিক্স এর জন্য ব্যবহার করে। এর ফলে ল্যাপটপের পারফরমেন্স কিছুটা কমে যায় ।

অন্যদিকে যে ল্যাপটপগুলোতে ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড লেখা থাকে সেই ল্যাপটপগুলোতে আলাদাভাবে গ্রাফিক্স কার্ড লাগানো থাকে । তাই এই ধরনের ল্যাপটপগুলির পারফরমেন্স একটু ভালো হয় ।

HDD (Hard disk drive )

HDD এর পুরো নাম হলো Hard disk drive । HDD এর কাজ হলো ডেটা স্টোর করে রাখা । এই হার্ড ডিস্ক ড্রাইভের ভিতরে একটি চলমান ডিস্ক থাকে যার নাম এই Platter । এই Platter এ ডেটা স্টোর হয় । বেশিরভাগ ল্যাপটপগুলিতে আমরা HDD স্টোরেজ ডিভাইস দেখতে পাই ।

কারণ HDD কিছুটা সস্তায় পাওয়া যায় । তবে HDD ল্যাপটপগুলির Read এবং Write স্পিড কম হয় । যে ব্যাবহারকারীরা ল্যাপটপে অফিসের কাজ , ভিডিও দেখা , পাওয়ারপয়েন্ট , এক্সেল , ডেটা এন্ট্রি এই সব কাজ করেন তারা এই ধরণের ল্যাপটপ নিতে পারেন । এছাড়া কম বাজেটের মধ্যে HDD তে অধিক স্টোরেজ ক্যাপাসিটি পাওয়া যায় ।

SSD (Solid-state drive )

SSD হলো ল্যাপটপে ব্যাবহৃত নতুন প্রজন্মের স্টোরেজ ডিভাইস । SSD তে একটি মেমোরী চিপ থাকে যার নাম Nand flash মেমোরী । SSD স্টোরেজ ডিভাইস এর দাম HDD এর থেকে কিছুটা বেশি । SSD ল্যাপটপগুলির সুবিধা হলো

  • SSD ব্যবহারের ফলে ল্যাপটপের Read এবং Write স্পিড বেশি হয় ।
  • SSD ব্যবহারের সুবিধা হলো হার্ড ডিস্কের তুলনায় এর আয়ু অনেক বেশি ।
  • SSD খুব কম পাওয়ার এ চলতে পারে । তাই ল্যাপটপের ব্যাটারী ব্যাকআপ ভালো পাওয়া যায় ।
  • SSD ব্যবহারের ফলে ল্যাপটপের অ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়্যার ফাস্ট ওপেন হয় , ফাইল ট্রান্সফার ফাস্ট হয় ইত্যাদি ।

অর্থাৎ যে ব্যাবহারকারীরা অধিক পরিমানে ডেটা ,প্রোগামিং , ভিডিও এডিটিং , ও আরো হাই ফাই কাজ করেন তারা এই ধরণের ল্যাপটপ কিনতে পারেন ।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।